হাসিনার লুটপাটের অনুসন্ধান দেশ ছাড়ছেন আমলা-কামলারা
ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ৯ প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আমলা,পদস্থ কর্মকর্তা,ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের ভূমিকা ও নাম। এর মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)ও সাবেক পদস্থ কর্মকর্তা যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছে ডাকসাইটে আমলাদের নাম। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান টিমের সংগৃহিত প্রাথমিক তথ্য-উপাত্তের মধ্যেই প্রমাণ মিলছে তাদের সংশ্লিষ্টতা।র এ বিষয়ে টিম গঠনের পর পরই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এ আমলাদের অনেকে দৃশ্যপটের আড়ালে চলে গেছেন। কেউবা চেষ্টা চালাচ্ছেন স্বাভাবিক অবসরের পূর্ণ সুবিধা নিয়ে দেশ ছাড়ার। তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
সূত্রটি জানায়, শেখ হাসিনা উন্নয়নের ধোঁয়া তুলে একেকটি মেগা প্রকল্প ফাদতেন। প্রকল্পগুলোর প্রধান উদ্দেশ্যই ছিলো নিজে,পরিবারের সদস্য, ঘনিষ্ট আমলা, ব্যবসায়ী,ঠিকাদার ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় কর্মরত প্রকৌশলীদের অবাধ লুন্ঠনের উছিলা তৈরি করা হয়। সাধারণ মানুষ এতে আদৌ কোনো উপকৃত হবেন কি না-সেই ভাবনা ছিলো সুদূর পরাহত। প্রকল্পের নামে ফসলি জমি কয়েকগুণ দামে অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট, অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ সংযোগ,গ্যাস,পানি ও স্যুয়ারেজ লাইন নির্মাণে ব্যয় করতেন হাজার হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নকালে কয়েকদফায় বাড়ানো হতো বাস্তবায়ন ব্যয়। তদুপরি প্রকল্প থেকে মানুষ তেমন কোনো উপকৃত হয়নি। কোনো কোনো প্রকল্প পরিবেশ দূষণ, ফসলি জমি বিনষ্ট ,মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়াকরণসহ নানামুখি দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তেমন কোনো ভূমিকা না রাখলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট আমলা-কামলা আর ঠিকাদাররা হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। তারা বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলেছেন সেকেন্ডহোম। এক সময় হাসিনা সরকারের অবসান হতে পারে-এমন আশঙ্কা তাদের মধ্যে সবসময়ই ছিলো। তাই ধূর্ত আমলা-কামলারা পরিবার-পরিজনকে আগেভাগেই স্যাটেল করেছেন আমেরিকা,কানাডা,বৃটেন,ফ্রান্স,অস্ট্রেলিয়া,সিঙ্গাপুর কিংবা মালয়েশিয়ায়। ৫ আগস্ট হাসিনা উৎখাত হওয়ার পর এখন হাত পড়েছে তার দুর্নীতিতে। এসব দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত হলে ধরা খানে হাসিনার দুর্নীতির সহযোগী প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে তারা যে যেভাবে পারেন, ছাড়ছেন দেশ।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এবং দুদকসূত্রগুলো জানায়, গত ২৩ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার বহুল প্রচারিত ৯টি প্রকল্পের দুর্নীতি অনুসন্ধানে টিম গঠন করে দুদক। উপ-পরিচালক মো: সালাহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত টিমের অপর সদস্যরা হলেন, উপ-পরিচালক মো: সাইদুজ্জামান, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া, সহকারী পরিচালক এসএম রাশেদুল হাসান ও সহকারী পরিচালক একেএম মর্তুজা আলী সাগর। উক্ত টিম ইতিমধ্যেই প্রকল্পে সংঘটিত দুর্নীতি সম্পর্কে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন সংগ্রহ করে। অনুসন্ধান পর্যায়ে রেকর্ডপত্র চেয়ে গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা দফতরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২, বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই ১ম পর্যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পানি শোধনাগার ও গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ২টি মডার্ণ ফায়ার স্টেশন স্থাপন প্রকল্প, মীরসরাইয়ের ভারতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর (বিএসএমএসএন) উন্নয়ন প্রকল্প এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। চিঠির মাধ্যমে যাচিত রেকর্ডপত্রের মধ্যে রয়েছে প্রকল্প প্রস্তাব, প্রাক্কলন,অনুমোদিত প্রস্তাব,প্রাক্কলন, বাজেট অনুমোদন, বরাদ্দ, অর্থ ছাড়করণ, ব্যয়কৃত অর্থের পরিমাণ, এ সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র এবং প্রকল্পে সংঘটিত দুর্নীতি বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়ে থাকলে সেই প্রতিবেদন এবং প্রকল্প সময়ে পৃথক সারসংক্ষেপের কপি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এসব রেকর্ডপত্র হাতে পেলেই প্রকল্পের নামে অর্থ অপচয়,লুন্ঠনে কোন্ পর্যায়ে কার কি ভূমিকা সেটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
Post a Comment